গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমেরিকার রাস্তায় পাকিস্তানি ক্রিকেটার মোহাম্মদ রিজওয়ান স্যালুট জানালেন

আফগানিস্তানের বাংলাদেশ সফরে বড় সাফল্য পেল টাইগাররা। ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে দিল বাংলাদেশ। আফগানদের পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে দিয়ে বাইশ গজে নতুন ইতিহাস লিখল বাংলাদেশ। একবিংশ শতাব্দীতে রানের দিক থেকে সর্ববৃহৎ জয় পেল বাংলাদেশ। সামগ্রিকভাবে তৃতীয় বৃহত্তম এই জয়ের পূর্ববর্তী দুটি ছিল ১৯২৮ এবং ১৯৩৪ সালে। তবে এই দুটি ম্যাচ ছিল টাইম লেস টেস্ট ম্য়াচ। অর্থাৎ ম্যাচের ফল না পাওয়া পর্যন্ত খেলা চলত। অর্থাৎ ম্যাচের কোনও সময় সীমা ধার্য করা হত না। অর্নিদিষ্ট কাল ধরে চলত টেস্ট ম্যাচ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টেস্ট ম্যাচ নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে খেলা হতে থাকে।

যেমন এখন পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়ে থাকে। সেই অর্নিদিষ্ট কাল ধরে চলা টেস্ট ম্যাচের ফল বাদ দিলে জয়ের ব্যবধানের বিচারে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ।পাঁচ দিনের এই টেস্ট ম্যাচে প্রথম দিন থেকে টেস্ট ম্যাচ পুরোটাই ছিল বাংলাদেশের দখলে, অন্যদিকে আফগানিস্তান ছিল অনেকটাই পিছিয়ে। প্রথম ইনিংসে ২৩৬ রানের সুবিধা পাওয়া এবং দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ৩৭০ রানে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও ফলো-অন প্রয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ঢাকায় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টে নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরিতে জয় সহজ করে দেয় বাংলাদেশের জন্য।

শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে আফগানদের ৫১ রানে ৪ উইকেট করে দেয় বাংলাদেশ। এরপর নাসির জামাল ও আফসার জাজাই পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৬৫ রানের জুটি গড়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। কিন্তু মেহেদি সেই জুটি ভেঙে দেন এবং মাত্র ১১৫ রানে অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান যা বাংলাদেশকে বিশাল ব্যবধানে জয় এনে দেয়। রানের বড় ব্যবধানে বড় টেস্ট জয়ের জন্য যেন মঞ্চ তৈরি করাই ছিল এবং বাংলাদেশ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সুযোগটি কাজে লাগাতে কোনও ভুল করেনি বাংলাদেশ।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনে স্বাগতিকদের জয় নিশ্চিত করতে আট উইকেটের প্রয়োজন ছিল, আর অবশিষ্ট দুই দিনে ৬০০-র বেশি রান করার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল আফগানিস্তান। আফগানিস্তান পিছিয়ে পড়তে থাকায় বাংলাদেশ ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচটি জয়লাভ করে, যা ১৯৩৪ সালের পর টেস্ট ইতিহাসে একটি রেকর্ড ভাঙা জয়। কারণ সে সময় অস্ট্রেলিয়া ওভালে ইংল্যান্ডকে ৫৬২ রানে পরাজিত করেছিল। ফলে, এই শতাব্দীর রানের দিক থেকে এটিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় জয়।আট উইকেট হাতে রেখে দিন শুরু করলেও সকালের সেশনেই সবকটি হারায় আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের পক্ষে রহমত শাহ সর্বোচ্চ ৩০ রান করেন, অন্য কোনও আফগান ব্যাটসম্যান ২০ রান স্পর্শ করতে পারেনি। বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন আহমেদ ৩৭ রান দিয়ে ৪টি এবং শরিফুল ইসলাম ৩টি উইকেট নেন। নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি ও মাহমুদুল হাসান জয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রান তোলে বাংলাদেশ। অভিষেক ম্যাচে নিজাত মাসুদ আফগানিস্তানের হয়ে পাঁচ উইকেট নেন। দ্বিতীয় আফগান বোলার হিসেবে টেস্ট অভিষেকে পাঁচ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন নিজাত মাসুদ।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩৮২ রানের জবাবে আফগানিস্তান ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় এবং পেসারদের অনুকূলে থাকা পিচে ইবাদত হোসেন চারটি উইকেট নেন। ফলস্বরূপ, প্রথম ইনিংসে ২৩৪ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। শান্ত দ্বিতীয় ইনিংসে তার শক্তিশালী পারফরম্যান্স অব্যাহত রেখে আরও একটি সেঞ্চুরি করেন। মুমিনুল হকের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েন তিনি। বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেটে ৪২৫ রান করে আফগানিস্তানকে ৬৬১ রানের বিশাল লক্ষ্য দেয়। এই কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি আফগান ব্যাটসম্যানরা যথাযথ মনোবলের সঙ্গে তাদের ব্যাটিংয়ের দিকে এগিয়ে যেতে ব্যর্থ হয় এবং তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে দুটি উইকেট হারায়। শেষ পর্যন্ত ১১৫ রানে শেষ হয় আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস। ৫৪৬ রানের বড় ব্যবধানে হারে আফগানিস্তান। এরপরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আগামী জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসবে আফগানিস্তান।